Why we want our voice to be heard?

Pages

Friday, August 19, 2011

ঔপনিবেশিক খোঁয়াড়ি ও আদিবাসী প্রসঙ্গ - তারেক আহমেদ


তারেক আহমেদ

ঔপনিবেশিক খোঁয়াড়ি ও আদিবাসী প্রসঙ্গ



tareq-fসংবিধানের বহুল আলোচিত পঞ্চদশ সংশোধনী সংসদে পাস হয়েছে অনেকদিন হলো। কিন্তু এ নিয়ে বিতর্কের শেষ এখনো হয় নি। পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি আর রাজা দেবাশীষ রায়ের পাল্টাপাল্টি বক্তব্য থেকে আমরা সেটা পরিষ্কার বুঝতে পারছি।

অনেকেই আশা করেছিলেন, বৃহত্তর ঐক্য স্থাপনের লক্ষ্যে ক্ষমতাসীন মহাজোট সরকার সংবিধান সংশোধনে তাড়াহুড়ো করবে না। বাস্তবে তারা সেটাই করেছেন কিন্তু শেষ পর্যন্ত ঘটনা উল্টো পথেই গেল। নানা ধরনের বিতর্কিত ধারা ও গোজামিল রেখে এমনকি নিজেদের জোটভুক্ত বাম রাজনৈতিক দলগুলোর কথাও পাত্তা না দিয়ে আওয়ামী লীগ যেন এককভাবেই পাস করলো পঞ্চদশ সংশোধনী। শেষের দিকে অনেকটা তড়িঘড়ি করায় মহাজোট সমর্থক দল বা মতের মানুষ কিম্বা এর বাইরেও যারা কোন না কোনভাবে তাদের চিন্তা ধারন করেন, তারাও প্রবলভাবে হতাশ ও ক্ষুব্ধ হয়েছেন।

অন্যদিকে বি.এন.পিসহ সমমনা দলগুলো জানিয়েছে, সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা না থাকায় তারা মহাজোট সরকারের সাথে আর আলাপে আগ্রহী হয়নি। আন্দোলনই তাদের দাবী আদায়ের পথ এখন। উল্লেখ্য, সংবিধান সংশোধনে মোট ৫৫ দফা প্রস্তাব পেশ করা হলেও আমাদের রাজনীতি, সংবিধান, আদালত আর গোটা দেশের মানুষের চিন্তাই যেন এখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুতে আটকে গেছে। পরিহাসের বিষয় হলো, মাত্র দেড় দশক আগে এই তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে দেশে চরম অচলাবস্থা তৈরি হয়েছিল। তখন সেই আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিল আজকের ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। আর সরকার ছিল বি.এ.পির। আজ ক্ষমতায় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোট সরকার। আর বি.এন.পি বসেছে বিরোধী আসনে।

আমাদের রাজনীতিবিদ ও আইন প্রণেতারা এমন এক সময়ে এই আপাতঃ নিরর্থক বিষয়ে কুতর্কে মেতেছেন — যখন দেশের মানুষ দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি ও মূল্যস্ফীতির উর্ধ্বমুখী চাপে নাভিশ্বাস ফেলছে। পুলিশ নামের রাষ্ট্রীয় বাহিনী যাকে খুশি তাকে মারবো কায়দায় মানুষ খুন করে চলেছে একের পর এক। যানজটে অসহায় নগর জীবন। 

টেন্ডারবাজি, নদী – খাল-বিল দখল হয়ে দাড়িয়েছে ক্ষমতাবানদের রুটিনওয়ার্ক। লোডশেডিং আর জ্বালানী সংকটে মানুষের দৈনন্দিন জীবন দুর্বিষহ। ব্যবসা বানিজ্যও প্রায় স্থবির।

এখানে উল্লেখ না করলেও চলে, ’৭২ সনে প্রণয়নের পর আমাদের সংবিধানের এত ব্যাপক সংশোধনের উদ্যোগ আর নেয়া হয় নি। যদিও নানা সময়ে ঘটে যাওয়া নানা পরিবর্তনে এর মৌলিক চরিত্র অনেকটাই পাল্টে গেছে। 

এক্ষেত্রে সংবিধানের ৪র্থ, ৫ম বা ৮ম সংশোধনীর কথা তো বহুবার আলোচিত হয়েছে। তবে, সংবিধান সংশোধনের একটি প্রস্তাব কিন্তু গত ৩৯ বছর ধরেই ঝুলে আছে। তা হলো, আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি প্রদান। এই দাবীটি বাহাত্তরেই তোলা হয়েছিল। ’৭০ এর নির্বাচনে পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে নির্বাচিত স্বতন্ত্র গণপরিষদ সদস্য মানবেন্দ্র নারায়ন লারমা আদিবাসীদের একমাত্র প্রতিনিধি হিসেবে সেদিন গণপরিষদে জোর গলায় বাঙালি ভিন্ন অন্য জাতিসত্বার মানুষদের স্বীকৃতির এই দাবী তুলেছিলেন। কিন্তু ’বাঙালী জাতীয়তাবাদী’দের প্রবল চাপে আর হুঙ্কারে সেদিন গণপরিষদে তার কণ্ঠ চাপা পড়ে গিয়েছিল। একাধিকবার ওয়াক আউট করেও কুল হয়নি। পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশের অন্যান্য অংশে বসবাসরত আদিবাসীদেরও সেদিন বাঙালী পরিচয় মিলেছিল সংবিধানের বদৌলতে।

তার ফলও মিললো হাতে নাতে। ’৭৩-এর নির্বাচনের আগে বঙ্গবন্ধু রাঙামাটি সফরে গেলেন। পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসীদের তিনি আহবান জানালেন, তোমরা বাঙালি হয়ে যাও। একথা বলার সময় তিনি ভুলে গেলেন জিন্নাহ সাহেবের কথা। পাকিস্থানের জাতির জনক যে কায়েদে আজম ’৪৮ সনে ঢাকায় এসে বলেছিলেন একই কথা –Urdu and Urdu shall be, will be the state language of Pakistan। ২৫ বছর পর নিজ দেশের প্রান্তসীমায় বসবাসকারী ভিন্ন ভাষাভাষী কিছু মানুষ যারা বাংলাদেশেরই বাসিন্দা, মুক্তিযুদ্ধে যারা রেখেছে অবদান, করেছে যুদ্ধ সেদিন বঙ্গবন্ধু এসব বিবেচনায় না এনেই তিনি বলে ফেলেছিলেন — তোমরা বাঙালি হয়ে যাও। যদিও তার বক্তব্যের যথার্থতা নিয়ে, মহাজোট সমর্থক বুদ্ধিজীবিদের কারো কারো মনে সংশয় আছে। কেউ কেউ এমনও মনে করেন, তিনি সরল মনেই কথাটি বলেছিলেন।

ইতিহাস বড়ই নিষ্ঠুর। তার এই ’সরল’ উক্তির কারণে পরবর্তী দু’দশকেরও বেশি সময় পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসীদের রীতিমতো জেরবার হতে হয়েছে। ভিটেমাটি হারিয়ে, হত্যা, গুম, জখম, ধর্ষণ, লুটপাট, দেশত্যাগ, গণঅপহরন — হেন প্রকার নির্যাতন নেই যা মুজিব পরবর্তী দুই সামরিক শাসক জিয়া ও এরশাদ তাদের ওপর চাপিয়ে দেয় নি। গোটা পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসীদেরই এই সন্ত্রাসের মুখোমুখি হতে হয়েছে। কী অপরাধ তাদের ? তারা নিজেদের পরিচয় চেয়েছিলেন, দেশের সংবিধানে তাদের জাতিগত অধিকার চেয়েছিলেন। তাদের বলা হোল, তোমরা বিচ্ছিন্নতাবাদী। তোমরা ভারতের দালাল। কি পরিহাস, উপনিবেশিক পাকিস্থান রাষ্ট্রে যারা বাঙালিদের অধিকার নিয়ে কথা বলতো– পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী তাদেরও ভারতের দালাল বলতো।

তাদের দাবিয়ে রাখবার জন্য ’ডিভাইড এন্ড রুল’ পলিসি প্রয়োগ করা হলো যা ঔপনিবেশিক বৃটিশ শাসকরা একসময় এদেশে প্রয়োগ করেছিল। দেশের অন্য জেলাগুলো থেকে বিশেষতঃ নদীভাঙা হতদরিদ্র মানুষ আর ভূমিহীনদের রীতিমতো প্রলোভন দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে নিয়ে যাওয়া হলো। রাষ্ট্র, সেনাবাহিনী, সিভিল আমলাতন্ত্র, রাজনীতিবিদ — সকলের মিলিত ষড়যন্ত্রে সম্ভব হলো এই ব্যাপক মানব স্থানান্তর। ’৪৭এর দেশভাগের পর সাম্প্রতিক সময়ে এত ব্যাপক সংখ্যক মানুষের স্থানান্তর আর দেখা যায় নি। ব্যাপারটা নিরবে ঘটেছে। দেশের অন্যান্য এলাকার কয়েক লক্ষ বাঙালি তাদের ঠাই খুঁজে পেল পার্বত্য চট্টগ্রামে। ফলশ্রুতিতে পার্বত্য চট্টগ্রামের চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, তঞ্চঙ্গ্যাসহ অন্য আদিবাসীরাও ব্যাপক হারে দেশত্যাগে বাধ্য হলো। তাদের আশ্রয় হলো পার্শ্ববর্তী ভারতের ত্রিপুরা, অরুনাচল, মিজোরাম প্রদেশে। বাকি যারা রইলেন, তাদের অবস্থা হলো — নিজ দেশে পরবাসীর মতো। রাষ্ট্র তার এই নাগরিকদের রীতিমতো দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিকে পরিণত করলো এভাবে। আর গোটা পার্বত্য চট্টগ্রামে স্থানান্তরিত বাঙালি ও আদিবাসী — এই দুই জনগোষ্ঠীকে পরস্পরের মুখোমুখি দাড় করিয়ে দিল। বিভক্তির এই খেলাটি পাকিস্থানের ঔপনিবেশিক শাসকরাও খেলেছিলেন। তখন তাদের তুরুপের তাস হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছিল, ভারতের বিহার থেকে আগত মুসলিম বিহারীরা। যে হতভাগ্য জনগোষ্ঠী নিজের জন্মভূমি ছেড়ে কেবল মুসলিম একটি রাষ্ট্র লাভের আশায় পাকিস্থানে এসেছিল।

ক্ষমতাসীন মহাজোট সরকার ও তার সমর্থক কিছু বুদ্ধিজীবির ভাব দেখে মনে হচ্ছে, আদিবাসীরা কেবল পার্বত্য চট্টগ্রামেই বসবাস করেন। সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে আদিবাসীদের তাতে আদিবাসী হিসেবে অন্তর্ভুক্তির দাবি উঠলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়,আদিবাসীদের স্বীকৃতি দেয়ার বিরুদ্ধে নাকি গোয়েন্দা রিপোর্টও সরকারের কাছে দেয়া হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, আদিবাসীদের স্বীকৃতি দিলে, পার্বত্য চট্টগ্রামে অনেক অঘটন ঘটে যাবে। এমন কি পূর্ব তিমুরের অবস্থাও তৈরি হতে পারে সেখানে। তাদের অধিকারের স্বীকৃতি দিলে নাকি পার্বত্য চট্টগ্রামে খ্রীস্টান রাষ্ট্রও তৈরি হতে পারে।

কিন্তু , বাংলাদেশের আদিবাসীদের সম্পর্কে যারা খানিকটা খবরও রাখেন, তারা জানেন — শুধু পার্বত্য এলাকায় নয়, সারা বাংলাদেশেই নানা জাতের এই মানুষেরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছেন। এমনকি, বলা হয়ে থাকে, সংখ্যার দিক থেকে তো বটেই, জাতিগত বৈচিত্র্যের দিক থেকেও উত্তরবঙ্গে সর্বাধিক সংখ্যক আদিবাসী বসবাস করেন। বৃহত্তর সিলেট অঞ্চল বা ময়মনসিংহের নানা এলাকায়ও তাদের সংখ্যা খুব একটা কম নয়। পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে তবে এত উদ্বেগ কেন ? কারণ একটিই, পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসীরা রাজনৈতিকভাবে অনেক সচেতন এবং সংগঠিত। নিজেদের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে তারা দীর্ঘকাল ধরেই আন্দোলন চালিয়ে আসছে। উত্তরবঙ্গসহ দেশের অন্য এলাকার আদিবাসীরা সংগঠিতভাবে তাদের অধিকারের কথাটি অত জোরালোভাবে বলতে পারছেন না।

দেশের অন্য এলাকার আদিবাসী মানুষগুলোও যে খুব ভাল আছেন — এমনটা বলা যাবে না। বছর ৬/৭ আগে পেশাগত একটি কাজে উত্তরবঙ্গের আদিবাসী অধ্যুষিত জেলাগুলোয় দীর্ঘ সময় থাকবার সুযোগ হয়েছিল। তখন উত্তরবঙ্গের রাজোয়াড়, পাহান, কুর্মী, লহড়া, মালো, মুড়ীয়াড়ী বা ভূইমালী নামের আদিবাসী জনগোষ্ঠীর মানুষজনকে কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয়েছিল। অপেক্ষাকৃত কম জনসংখ্যার এই নানা জাতির মানুষগুলোর অবস্থা এতটাই করুন যে, নিজেদের আত্মপরিচয়টুকুও ধরে রাখতে পারছে না তারা। একদিকে দারিদ্র আর অন্যদিকে মূলধারার বাঙালিদের ক্রমাগত নিপীড়ন, ভূমি থেকে উচ্ছেদ, নারী অপহরন, লুটপাট, আগুন দেয়ার মতো ঘটনা উত্তরবঙ্গের আদিবাসীদের প্রায়শই মোকাবেলা করতে হচ্ছে। এক্ষেত্রে নিরুপায় হয়ে অনেকে ধর্মান্তরিতও হচ্ছে। কারন আর কিছুই নয়– নিরাপত্তা। আর্থিক ও সামাজিক — দুরকম নিরাপত্তার আশায়ই আদিবাসীদের অনেকে ধর্মান্তরিত হচ্ছেন। এই প্রবণতা শুধু উত্তরবঙ্গ নয় — দেশের অন্য আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকায়ও দেখা গেছে। 

অন্যদিকে, রাষ্ট্র এই মানুষগুলোকে কোন অধিকার দেয়া তো দূরে থাক–যতরকমভাবে সম্ভব তাদের বঞ্চিত করছে।
মধুপুর বা সিলেটে যারা বসবাস করেন সেই গারো, হাজং, কোচ, খাসিয়া বা মনিপুরীরাও খুব ভালো অবস্থায় নেই। পীরেন স্লান আর চলেশ রিছিলের হত্যাকাণ্ডের কথা নিশ্চয়ই এখনও ভুলে যান নি অনেকে। তাদের হত্যাকাণ্ডের পর তো ক’বছর কেটে গেল– এই হত্যার কোন বিচার কি হয়েছে ? উল্টো বন বিভাগের উদ্যোগে ইকোপার্ক করবার জন্য ভূমি অধিগ্রহণের কারণে ভবিষ্যতেও যে আর কোন পীরেন স্লান নিহত হবে না — সেই গ্যারান্টিই বা কে দেবে । গোটা মধুপর এলাকার শালবন অঞ্চলকেই ইকো পার্কের নামে দেয়াল দিয়ে ঘিরে ফেলবার চেষ্টা কয়েক বছর ধরেই চলছে। এক সময়কার গভীর শালবন এখন অনেকটাই ফাকা ফাকা। বন কেটে আনারস আর কলার বাগান করা হয়েছে। একাজে স্থানীয় আদিবাসীদেরও জড়িত করা হয়েছে। এখানেও মূল কর্তৃত্ব কিন্তু বাঙালিদের হাতেই। ইকোপার্ক বিষয়ে সরকারের দাবী, অনেক পর্যটক আকৃষ্ট হবে তাতে। আর দেশ বিদেশ থেকে পর্যটকরা এখানে এসে বন যেমন দেখবেন, তেমনি বনের মানুষ হিসেবে আদিবাসীদেরও প্রদর্শন করা হবে তাদের কাছে। তাদের জীবন তাই দেয়াল দিয়ে ঘিরে ফেলা হচ্ছে। বন্ধ গেট থাকবে সেখানে। তালা খোলা হলে তারা লোকালয়ে আসবে আবার সন্ধ্যা হলেই তাদের সেই দেয়াল ঘেরা বনে ফিরিয়ে নেয়া হবে।


কাজেই,এদেশেও যে আদিবাসীরা অনেকটা এই নয়া উপনিবেশের শিকার– তা আর বিস্তৃত না বললেও চলে। আমাদের রাষ্ট্র আর প্রতিপালক শাসকগোষ্ঠী এখন সংবিধানে তাদের নতুন নামকরণ করেছে। এখন আদিবাসীদের আদিবাসী বলা যাবে না। তারা পরিচিত হবেন—-উপজাতি, ক্ষুদ্র জাতি সত্বা আর ক্ষুদ্র নৃত্বাত্বিক গোষ্ঠী বা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী হিসেবে। সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতে এই বিশেষ গোষ্ঠীর মানুষদের সংস্কৃতি সংরক্ষণ ও উন্নয়নের দায়িত্ব সরকারকে দেয়া হয়েছে। অনেকটা পরিবেশ ও বন্যপ্রাণী যেভাবে সংরক্ষন করা হয়–সেভাবেই যেন এইসব ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক মানুষদের সংরক্ষণ করা হবে। কারণ এই একই কায়দায় তাদের সংরক্ষণ করছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র,অস্ট্রেলিয়া ইত্যাদি দেশ। মাঝে মাঝে বিশেষ দিনে আর আয়োজনে বিশেষ অতিথি এল, তাকে আমাদের ’ট্রাইবাল’ সংস্কৃতির খানিকটা দেখাবো। এখন যেমন শিল্পকলা একাডেমীসহ নানা জাতীয় প্রতিষ্ঠান তাদের প্রদর্শন করে থাকে।

আমাদের মাননীয় মন্ত্রীরা এর সপক্ষে যুক্তিও তুলে ধরেছেন। তারা বলছেন, আই.এল.ও কনভেনশনে যেমন তাদের বিজিত দেশের বাসিন্দা বলা হয়েছে –বাংলাদেশের এই বিশেষ মানুষগুলো তো সেরকম নন। তারা কোন ঔপনিবেশিক আক্রমণের শিকার তো হন নি। তাদের দেশ তো কেউ দখল করে নেয়নি। এমনকি, কারা আদিতে এসেছেন–এ ধরনের কুতর্কও তোলার চেষ্টা করছেন কেউ কেউ। উদ্দেশ্যটি পরিস্কার, সংবিধানে তাদের যে নতুন পরিচয় নির্ধারণ করা হয়েছে তা যুক্তি দিয়ে প্রতিষ্ঠিত করবার চেষ্টা করা। যাতে বোঝা যায়, দেশের এসব ভিন্ন ভিন্ন ভাষা ও সংস্কৃতির মানুষগুলো এদেশে বিশেষ ধরনের নাগরিক।

এখন তাদের পরিচয়ও নতুন করে নির্ধারণ করা হয়েছে। তাদের বাঙালি পরিচয়টি আগে থেকেই ছিল। এবারের সংবিধান সংশোধণীতেও তারা নিজ নিজ জাতির মানুষ হিসেবে স্বীকৃতি পেল না। বাংলাদেশ নামের এই রাষ্ট্রে চার দশক আগেও আদিবাসীদের অবস্থান যা ছিল, আজও তা রয়ে গেল। বরং সংবিধানে তাদের বিশেষ নামে অভিহিত করে আমরা বাঙালি হিসেবে যে নব্য উপনিবেশিক একটি পরিচয় তাদের জন্য নির্ধারণ করে দিলাম, সেটি এখন প্রমাণিত। এই পরিচয় নির্মানের রাজনীতি এখন গোটা দুনিয়া জুড়েই চলছে। মার্কিনীরা দুনিয়ার সব দেশেই মুসলিম নামধারী কোন মানুষ পেলে তাকে সন্ত্রাসী আখ্যা দিচ্ছে। গোটা পশ্চিম দুনিয়ায় মুসলমান মানেই সন্ত্রাসী। বিশেষ একটি ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মানুষের এই বিশেষ পরিচয় যে নব্য উপনিবেশিক ধারণারই বিস্তার ঘটায় — তা বোধ হয় বিস্তৃত না বললেও চলে। সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে দেশের আদিবাসীদের কেবল সংখ্যার বিচারে উপজাতি, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ইত্যাদি নামে আখ্যা দিয়ে বাংলাদেশও রাষ্ট্র হিসেবে সেই নব্য উপনিবেশিক রাষ্ট্র হিসেবে আবির্ভূত হলো।

--------------------------------------------
courtesy: bdnews24

No comments:

Post a Comment