‘জাতীয় নিরাপত্তার’ স্বার্থে নতুন নতুন শর্তারোপ?
বারবার ‘জাতীয় নিরাপত্তা’র ধোয়া তুলে সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামের ওপর নতুন নতুন শর্ত চাপিয়ে দিচ্ছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম ও সমতলে বসবাসকারী আদিবাসীদের নিয়ে নামকরণ রাজনীতির পর সরকার সাম্প্রতিক সময়ে বিদেশিদের পার্বত্য চট্টগ্রাম ভ্রমণের ওপর কঠিন শর্ত আরোপ করেছে। দুই বছর ধরে বাংলাদেশে বসবাসরত আদিবাসীদের পরিচিতি নিয়ে ব্যাপক তর্কবিতর্ক শুরু হয়। নির্বাচনী ইশতেহার থেকে সরে এসে এবং আদিবাসীদের সব দাবি অগ্রাহ্য করে সংবিধান সংশোধনীতে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী হিসেবে আদিবাসীদের প্রথমবারের মতো সংবিধানে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।
একই বছর ‘উপজাতি’ ও ‘ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী’ দুটো পরিচিতি সরকারিভাবে তৈরি করা হয় এবং একে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য সরকারি তৎপরতা জোরদার করা হয়। ডিসেম্বরে পার্বত্য চট্টগ্রাম মন্ত্রণালয় এবং ইউএনডিপির যৌথ উদ্যোগে করা ‘ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী’ মেলা আদিবাসীদের বিভিন্ন ফোরাম থেকে বযকট করা হয়। পার্বত্য চট্টগ্রামের সঙ্গে বাংলাদেশ রাষ্ট্রটির সম্পর্কটি অনেকটাই স্পষ্ট হয় পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে রাষ্ট্রের বিভিন্ন সময়ে নেওয়া অবস্থান পর্যালোচনা করলে। সাম্প্রতিক চাপিয়ে দেওয়া নিয়মটি পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ে সরকারের দৃষ্টিভঙ্গিরই অংশ। এই নতুন নিয়ম অনুযায়ী পাসপোর্ট, ভিসা, স্বরাষ্ট্র-পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতির পাশাপাশি পার্বত্য চট্টগ্রামে অবস্থান করতে হলে বিদেশিদের সেখানকার জেলা প্রশাসকের অনুমতি নিতে হবে। শুধু তা-ই নয়, তারা সেখানকার আদিবাসী বাসিন্দাদের সঙ্গে স্বাধীনভাবে কোনো ধরনের আলাপ-আলোচনা করতে পারবে না।
বিদেশিদের শুধু অনুমতি নিলেই চলবে না, এর সঙ্গে রয়েছে শর্ত। বিদেশি নাগরিকদের পার্বত্য চট্টগ্রামের কোনো জনগোষ্ঠীর সঙ্গে আলোচনা করতে হলে একজন সরকারি দায়িত্বশীল কর্মকর্তার উপস্থিতি লাগবে। বলা হয়েছে যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে ‘জাতীয় নিরাপত্তার’ স্বার্থে এসব শর্ত আরোপ করা হয়েছে। তবে এই ‘জাতীয় নিরাপত্তা’ বিষয়টি কার জন্য, কার ‘নিরাপত্তার’ স্বার্থ এতে রক্ষিত হয়, তা সহজেই অনুমেয়। ‘জাতীয়’ স্বার্থটিতে কোনোভাবেই পাহাড়ে বসবাসকারী আদিবাসীদের কোনো স্থান নেই। তবে বলা যায়, সরকারের এই ‘জাতীয় নিরাপত্তা’র পরিসর শুধু সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালিদের দিয়ে। আর এই ‘নিরাপত্তা’র প্যাকেজ দিয়ে নির্মিত সম্পর্কের ওপরই দাঁড়িয়ে আছে বাংলাদেশ রাষ্ট্রটির সঙ্গে আদিবাসীদের সম্পর্ক।
বিদেশি নাগরিকদের অনুমতিপত্রে আরও বেশ কিছু বিষয়ের উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, বান্দরবান জেলার যেকোনো স্থানে ভ্রমণের ক্ষেত্রে ভ্রমণকালীন কর্মকাণ্ড ও স্থান সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট থানায় সুস্পষ্ট অবহিত করে পুলিশের সহায়তায় ভ্রমণ স্থানে যাতায়াত করতে হবে। ভ্রমণ সম্পর্কে পুলিশকে অবহিত করা নির্ধারিত উদ্দেশ্য ব্যতীত কোনো রাজনৈতিক ও ধর্মীয় কার্যক্রমে অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকতে হবে। এবং আরও উল্লেখ করা হয়েছে, শুধু পূর্বনির্ধারিত ভ্রমণের স্থানগুলো বাদে অন্য কোনো স্থানে ধর্মীয় আলোচনা এবং প্রচারসংক্রান্ত কার্যক্রমে অংশগ্রহণ বা বক্তব্য প্রদান করা যাবে না। পার্বত্য চট্টগ্রামকেন্দ্রিক সরকারের এই নতুন শর্তের অংশ হিসেবে গত মাসের শেষ দিকে পার্বত্য চট্টগ্রাম কমিশনের সদস্যদেরও বান্দরবানের উজানিপাড়ায় অনুষ্ঠান করতে দেওয়া হয়নি। কারণ হিসেবে দেখানো হয়েছে, তারা প্রশাসনকে অবহিত করেনি।
তাহলে সরকার কি স্বীকার করে নিচ্ছে যে পার্বত্য চট্টগ্রাম বাংলাদেশের একটি অভ্যন্তরীণ উপনিবেশ? বাংলাদেশের অন্য আট-দশটি জেলায় কোনো বিদেশি গেলে সেখানে এ ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। যদি বিদেশিদের বাংলাদেশের আগমনের একটি উদ্দেশ্যই থাকে, তাহলে অন্য জেলাগুলোতেও তা হওয়ার কথা। সেখানে তাহলে এ ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না কেন? দেশে একমাত্র এই তিনটি জেলাতেই বিজিবি এবং সেনাবাহিনীর বিভিন্ন চেকপোস্টে গাড়ি দাঁড় করানো হয়। অনেক চেকপোস্টে নাম লিখতে হয়। বাকি ৬১টি জেলায় এটি হয় না। কেন হয় না? এই তিনটি জেলাতেই শুধু ‘জাতীয় নিরাপত্তা’ বিঘ্নিত হওয়ার উপাদান আছে?
কারণ, সবাই জানে যে পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে সরকারের উদ্দেশ্য ভিন্ন। এর আগে যখন দেশের ৬১টি জেলায় মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক ছিল, তখনো দীর্ঘদিন শুধু ‘জাতীয় নিরাপত্তা’র জন্য খাগড়াছড়ি, বান্দরবান এবং রাঙামাটি জেলা মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্কের বাইরে ছিল। তবে মজার বিষয় হলো, তখন কিন্তু সেনা ক্যাম্পগুলোতে মোবাইল ফোন চালু ছিল। সেখান থেকে পাহাড়ের আদিবাসীরা অন্য জায়গায় কথা বলতে পারত, কিন্তু শর্ত ছিল একটাই। তাদের বাংলা ভাষায় ফোনালাপ করতে হবে, যেন সেনাবাহিনীর সদস্যরা বুঝতে পারে তারা কোনো ধরনের ষড়যন্ত্র করছে কি না। এই যদি হয় রাষ্ট্রের সঙ্গে বসবাসকারী আদিবাসীদের সম্পর্ক, তাহলে বাংলাদেশে বসবাসরত আদিবাসীদের দিন দিন নতুন নতুন শর্তের চাদরে ঢেকে যাওয়ারই কথা। শুধু তা-ই নয়, বাঙালি সরকারি কর্মকর্তাদের শাস্তিকেন্দ্রিক বদলি হিসেবে পার্বত্য চট্টগ্রামকে বিবেচনা করার মনসিকতা এখনো বাংলাদেশে জারি আছে, যা আসলে পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষদের রাজনৈতিকভাবে বাংলাদেশের অংশ হিসেবে স্বীকৃতির প্রসঙ্গে দোনোমনাভাব তৈরি করায়।
আর ধর্ম প্রচারের যে অভিযোগ সাম্প্রতিক সময়ে সরকারের পক্ষ থেকে তোলা হচ্ছে, সেটি যে আসলে কোনো গুরুত্ব বহন করে না, তা আমরা বান্দরবান জেলার আদিবাসীদের ধর্মীয় পরিসংখ্যানের চিত্র থেকেই বুঝতে পারি। সেখানে মুসলিম আছে ৪৭.৬২ শতাংশ, বৌদ্ধধর্মাবলম্বী ৩৮ শতাংশ, খ্রিষ্টান ৭.২৭ শতাংশ, হিন্দু ৩.৫২ শতাংশ এবং ৩.৫৯ শতাংশ অন্যান্য ধর্মাবলম্বী। এই পরিসংখ্যান নিশ্চয়ই আমাদের এই বিষয়ে নিশ্চিত করে যে পার্বত্য চট্টগ্রামে সব বিদেশিই ধর্ম প্রচারে আসেন এবং তাঁরা ধর্মান্তরিত হওয়ার জন্য বিভিন্ন জনগোষ্ঠীকে অর্থ দিচ্ছেন—সরকারের এই আনুমানিক বয়ান নিশ্চিতভাবেই সঠিক নয়।
তাহলে অনুমাননির্ভর ধারণার ওপর ভিত্তি করে সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামে নতুন নতুন শর্ত তৈরি করছে, তা রাষ্ট্রের সাংস্কৃতিক বন্ধুত্ববাদকে খারিজ করে সাংস্কৃতিক একাত্মবাদী মানসিকতা তৈরি করতে সহায়তা করছে। আশা করি অচিরেই এ ধরনের শর্ত থেকে সরকার সরে এসে এবং পার্বত্য চট্টগ্রামকেন্দ্রিক ঔপনিবেশিক দৃষ্টিভঙ্গি পরিত্যাগ করে মুক্তির আলোকেই এই আদিবাসী মানুষদের সঙ্গে সম্পর্কের খোঁজ করবে।
একই বছর ‘উপজাতি’ ও ‘ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী’ দুটো পরিচিতি সরকারিভাবে তৈরি করা হয় এবং একে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য সরকারি তৎপরতা জোরদার করা হয়। ডিসেম্বরে পার্বত্য চট্টগ্রাম মন্ত্রণালয় এবং ইউএনডিপির যৌথ উদ্যোগে করা ‘ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী’ মেলা আদিবাসীদের বিভিন্ন ফোরাম থেকে বযকট করা হয়। পার্বত্য চট্টগ্রামের সঙ্গে বাংলাদেশ রাষ্ট্রটির সম্পর্কটি অনেকটাই স্পষ্ট হয় পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে রাষ্ট্রের বিভিন্ন সময়ে নেওয়া অবস্থান পর্যালোচনা করলে। সাম্প্রতিক চাপিয়ে দেওয়া নিয়মটি পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ে সরকারের দৃষ্টিভঙ্গিরই অংশ। এই নতুন নিয়ম অনুযায়ী পাসপোর্ট, ভিসা, স্বরাষ্ট্র-পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতির পাশাপাশি পার্বত্য চট্টগ্রামে অবস্থান করতে হলে বিদেশিদের সেখানকার জেলা প্রশাসকের অনুমতি নিতে হবে। শুধু তা-ই নয়, তারা সেখানকার আদিবাসী বাসিন্দাদের সঙ্গে স্বাধীনভাবে কোনো ধরনের আলাপ-আলোচনা করতে পারবে না।
বিদেশিদের শুধু অনুমতি নিলেই চলবে না, এর সঙ্গে রয়েছে শর্ত। বিদেশি নাগরিকদের পার্বত্য চট্টগ্রামের কোনো জনগোষ্ঠীর সঙ্গে আলোচনা করতে হলে একজন সরকারি দায়িত্বশীল কর্মকর্তার উপস্থিতি লাগবে। বলা হয়েছে যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে ‘জাতীয় নিরাপত্তার’ স্বার্থে এসব শর্ত আরোপ করা হয়েছে। তবে এই ‘জাতীয় নিরাপত্তা’ বিষয়টি কার জন্য, কার ‘নিরাপত্তার’ স্বার্থ এতে রক্ষিত হয়, তা সহজেই অনুমেয়। ‘জাতীয়’ স্বার্থটিতে কোনোভাবেই পাহাড়ে বসবাসকারী আদিবাসীদের কোনো স্থান নেই। তবে বলা যায়, সরকারের এই ‘জাতীয় নিরাপত্তা’র পরিসর শুধু সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালিদের দিয়ে। আর এই ‘নিরাপত্তা’র প্যাকেজ দিয়ে নির্মিত সম্পর্কের ওপরই দাঁড়িয়ে আছে বাংলাদেশ রাষ্ট্রটির সঙ্গে আদিবাসীদের সম্পর্ক।
বিদেশি নাগরিকদের অনুমতিপত্রে আরও বেশ কিছু বিষয়ের উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, বান্দরবান জেলার যেকোনো স্থানে ভ্রমণের ক্ষেত্রে ভ্রমণকালীন কর্মকাণ্ড ও স্থান সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট থানায় সুস্পষ্ট অবহিত করে পুলিশের সহায়তায় ভ্রমণ স্থানে যাতায়াত করতে হবে। ভ্রমণ সম্পর্কে পুলিশকে অবহিত করা নির্ধারিত উদ্দেশ্য ব্যতীত কোনো রাজনৈতিক ও ধর্মীয় কার্যক্রমে অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকতে হবে। এবং আরও উল্লেখ করা হয়েছে, শুধু পূর্বনির্ধারিত ভ্রমণের স্থানগুলো বাদে অন্য কোনো স্থানে ধর্মীয় আলোচনা এবং প্রচারসংক্রান্ত কার্যক্রমে অংশগ্রহণ বা বক্তব্য প্রদান করা যাবে না। পার্বত্য চট্টগ্রামকেন্দ্রিক সরকারের এই নতুন শর্তের অংশ হিসেবে গত মাসের শেষ দিকে পার্বত্য চট্টগ্রাম কমিশনের সদস্যদেরও বান্দরবানের উজানিপাড়ায় অনুষ্ঠান করতে দেওয়া হয়নি। কারণ হিসেবে দেখানো হয়েছে, তারা প্রশাসনকে অবহিত করেনি।
তাহলে সরকার কি স্বীকার করে নিচ্ছে যে পার্বত্য চট্টগ্রাম বাংলাদেশের একটি অভ্যন্তরীণ উপনিবেশ? বাংলাদেশের অন্য আট-দশটি জেলায় কোনো বিদেশি গেলে সেখানে এ ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। যদি বিদেশিদের বাংলাদেশের আগমনের একটি উদ্দেশ্যই থাকে, তাহলে অন্য জেলাগুলোতেও তা হওয়ার কথা। সেখানে তাহলে এ ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না কেন? দেশে একমাত্র এই তিনটি জেলাতেই বিজিবি এবং সেনাবাহিনীর বিভিন্ন চেকপোস্টে গাড়ি দাঁড় করানো হয়। অনেক চেকপোস্টে নাম লিখতে হয়। বাকি ৬১টি জেলায় এটি হয় না। কেন হয় না? এই তিনটি জেলাতেই শুধু ‘জাতীয় নিরাপত্তা’ বিঘ্নিত হওয়ার উপাদান আছে?
কারণ, সবাই জানে যে পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে সরকারের উদ্দেশ্য ভিন্ন। এর আগে যখন দেশের ৬১টি জেলায় মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক ছিল, তখনো দীর্ঘদিন শুধু ‘জাতীয় নিরাপত্তা’র জন্য খাগড়াছড়ি, বান্দরবান এবং রাঙামাটি জেলা মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্কের বাইরে ছিল। তবে মজার বিষয় হলো, তখন কিন্তু সেনা ক্যাম্পগুলোতে মোবাইল ফোন চালু ছিল। সেখান থেকে পাহাড়ের আদিবাসীরা অন্য জায়গায় কথা বলতে পারত, কিন্তু শর্ত ছিল একটাই। তাদের বাংলা ভাষায় ফোনালাপ করতে হবে, যেন সেনাবাহিনীর সদস্যরা বুঝতে পারে তারা কোনো ধরনের ষড়যন্ত্র করছে কি না। এই যদি হয় রাষ্ট্রের সঙ্গে বসবাসকারী আদিবাসীদের সম্পর্ক, তাহলে বাংলাদেশে বসবাসরত আদিবাসীদের দিন দিন নতুন নতুন শর্তের চাদরে ঢেকে যাওয়ারই কথা। শুধু তা-ই নয়, বাঙালি সরকারি কর্মকর্তাদের শাস্তিকেন্দ্রিক বদলি হিসেবে পার্বত্য চট্টগ্রামকে বিবেচনা করার মনসিকতা এখনো বাংলাদেশে জারি আছে, যা আসলে পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষদের রাজনৈতিকভাবে বাংলাদেশের অংশ হিসেবে স্বীকৃতির প্রসঙ্গে দোনোমনাভাব তৈরি করায়।
আর ধর্ম প্রচারের যে অভিযোগ সাম্প্রতিক সময়ে সরকারের পক্ষ থেকে তোলা হচ্ছে, সেটি যে আসলে কোনো গুরুত্ব বহন করে না, তা আমরা বান্দরবান জেলার আদিবাসীদের ধর্মীয় পরিসংখ্যানের চিত্র থেকেই বুঝতে পারি। সেখানে মুসলিম আছে ৪৭.৬২ শতাংশ, বৌদ্ধধর্মাবলম্বী ৩৮ শতাংশ, খ্রিষ্টান ৭.২৭ শতাংশ, হিন্দু ৩.৫২ শতাংশ এবং ৩.৫৯ শতাংশ অন্যান্য ধর্মাবলম্বী। এই পরিসংখ্যান নিশ্চয়ই আমাদের এই বিষয়ে নিশ্চিত করে যে পার্বত্য চট্টগ্রামে সব বিদেশিই ধর্ম প্রচারে আসেন এবং তাঁরা ধর্মান্তরিত হওয়ার জন্য বিভিন্ন জনগোষ্ঠীকে অর্থ দিচ্ছেন—সরকারের এই আনুমানিক বয়ান নিশ্চিতভাবেই সঠিক নয়।
তাহলে অনুমাননির্ভর ধারণার ওপর ভিত্তি করে সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামে নতুন নতুন শর্ত তৈরি করছে, তা রাষ্ট্রের সাংস্কৃতিক বন্ধুত্ববাদকে খারিজ করে সাংস্কৃতিক একাত্মবাদী মানসিকতা তৈরি করতে সহায়তা করছে। আশা করি অচিরেই এ ধরনের শর্ত থেকে সরকার সরে এসে এবং পার্বত্য চট্টগ্রামকেন্দ্রিক ঔপনিবেশিক দৃষ্টিভঙ্গি পরিত্যাগ করে মুক্তির আলোকেই এই আদিবাসী মানুষদের সঙ্গে সম্পর্কের খোঁজ করবে।
জোবাইদা নাসরীন: সহকারী অধ্যাপক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। পিএইচডি গবেষক, ডারহাম বিশ্ববিদ্যালয়, যুক্তরাজ্য।
zobaidanasreen@gmail.com
------------------------------------------------------------------------------------------------
Courtesy: Daily Prothom-Alo
No comments:
Post a Comment