সংবিধানের অনেক বক্তব্য পারস্পরিক সংঘাতমূলক
শ্যামল সরকার ও হারুন আল রশীদ | তারিখ: ০১-০১-২০১১
রাষ্ট্র কোনো ধর্মের পৃষ্ঠপোষকতা করবে না বলে প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করা হলেও সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম থাকছে। পাশাপাশি দেশে মুক্তবাজার অর্থনীতি চালু থাকলেও পুনর্বহাল হচ্ছে সমাজতন্ত্র। বাংলাদেশের নাগরিকেরা বাংলাদেশি হিসেবে পরিচিত হবেন বলে সংবিধানে উল্লেখ থাকলেও পুনর্বহাল হচ্ছে বাঙালি জাতীয়তাবাদ।
বাংলাদেশ কলাবরেটরস (বিশেষ ট্রাইব্যুনাল) আদেশসংক্রান্ত সংবিধানের ১২২ অনুচ্ছেদের ৪(ঙ) পুনর্বহাল হচ্ছে। ফলে ১৯৭২ সালে এই আইনের অধীনে যারা দোষী সাব্যস্ত হয়েছিল বা যাদের নামে মামলা হয়েছিল, সেগুলো পুনরুজ্জীবিত করা যাবে। পঁচাত্তরের ৩ নম্বর সামরিক ফরমানবলে ১৯৭২ সালের এই আদেশ বাতিল করা হয়েছিল।
পঞ্চম সংশোধনী বাতিল করে দেওয়া সুপ্রিম কোর্টের রায় ও নির্দেশনা অনুযায়ী সংবিধান পুনর্মুদ্রিত হচ্ছে এভাবেই। আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে রায় ও নির্দেশনার আলোকে সংবিধানে কী কী বিষয় কীভাবে প্রতিস্থাপিত হবে আর কী কী বিষয় বিলুপ্ত হবে, তা চূড়ান্ত করা হয়েছে। ইতিমধ্যে পাণ্ডুলিপি সরকারি ছাপাখানায় পাঠানো হয়েছে।
সংবিধানের কমবেশি ২৫টি অনুচ্ছেদের সম্পূর্ণ বা অংশবিশেষ পুনর্বহাল বা বাদ দেওয়া হয়েছে। উল্লেখযোগ্য অনুচ্ছেদগুলো হচ্ছে: ৮, ৯, ১০, ১২, ২৫, ৩৮, ৪২, ৪৭, ৬৪, ৬৬, ৮০, ৮৮, ৯৩, ৯৫, ৯৮, ৯৯, ১০১, ১০২, ১০৩, ১০৭, ১১৭, ১২২, ১৪২, ১৪৫(ক) ও ১৫২। সংবিধানের ১৪২ অনুচ্ছেদে গণভোটের যে বিধান ছিল, সেটিও বাদ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া চতুর্থ তফসিলের ৩(৩ক) ও ১৮ দফায় ১৯৭৫ সালের সামরিক শাসন ও সামরিক ফরমানকে বৈধতা দিয়ে যেসব বিধান রাখা হয়েছিল, তা বাদ দেওয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পঞ্চম সংশোধনীর রায় ও নির্দেশনার আলোকে সংবিধান পুনর্মুদ্রণ করা হলে অনেকগুলো বিষয় পরস্পরবিরোধী হবে, যা সংবিধানের মৌলিক নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে না। এটি অনেক ক্ষেত্রে স্ববিরোধী হিসেবে প্রতিভাত হবে।
জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, যেভাবে উচ্চ আদালতের রায় ও নির্দেশনার আলোকে সংবিধানের নতুন সংযোজন ও বিয়োজন হচ্ছে, সেভাবেই সরকারি ছাপাখানায় পাণ্ডুলিপি পাঠানো হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, সাংঘর্ষিক বিষয় কিছু থাকলে সংবিধান সংশোধন-সম্পর্কিত বিশেষ কমিটি তা বিবেচনা করে সংসদে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনতে পারে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সংবিধানের অষ্টম সংশোধনী নিয়ে হাইকোর্টে মামলা রয়েছে। তাই এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করা যাবে না। তবে যেটুকু করা হচ্ছে, তা সম্পূর্ণ রায় ও নির্দেশনার আলোকে।
সামরিক শাসক এরশাদের আমলে ১৯৮৮ সালে জাতীয় সংসদে অষ্টম সংশোধনীর মাধ্যমে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম ঘোষণা করা হয়। এ ক্ষেত্রে সংবিধানের ২ অনুচ্ছেদে অতিরিক্ত ২(ক) অনুচ্ছেদ প্রতিস্থাপন করে বলা হয়, প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম হবে। তবে অন্যান্য ধর্মও প্রজাতন্ত্রে শান্তিতে পালন করা যাবে।
বিশিষ্ট আইনজীবী এম জহির প্রথম আলোকে বলেন, সংশোধনে গঠিত বিশেষ কমিটিকে অবশ্যই ১২ অনুচ্ছেদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হয়, এমন সব বিষয় বিবেচনায় নেওয়া উচিত হবে।
বিশিষ্ট আইনীজীবী শাহ্দীন মালিক বলেন, সংবিধানের ১২ অনুচ্ছেদ প্রতিস্থাপিত হলে অষ্টম সংশোধনী এর সঙ্গে সাংঘর্ষিক হবে। সংবিধানের ২৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রণীত কোনো আইন-বিধান পরস্পর আইনের সঙ্গে যতটা সাংঘর্ষিক, ততটা বাতিল বলে গণ্য হবে। সংবিধানকে বলা হয় সর্বোচ্চ আইন, তাই এর কোনো অংশ আরেকটি অংশের সঙ্গে সাংঘর্ষিক থাকলে তা বিবেচনায় নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
বাহাত্তরের সংবিধানের ১২ অনুচ্ছেদে বলা ছিল, ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি বাস্তবায়নের জন্য (ক) সর্বপ্রকার সাম্প্রদায়িকতা (খ) রাষ্ট্র কর্তৃক কোনো ধর্মকে রাজনৈতিক মর্যাদা দান (গ) রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ধর্মীয় অপব্যবহার এবং (ঘ) কোনো বিশেষ ধর্ম পালনকারী ব্যক্তির প্রতি বৈষম্য, তার ওপর নিপীড়ন বিলোপ করা হবে।
আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, সুপ্রিম কোর্টের রায় ও পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী ১৯৭২ সালের মূল সংবিধানে সন্নিবেশিত ১২ অনুচ্ছেদ প্রতিস্থাপন হচ্ছে।
সংবিধান সংশোধনে গঠিত বিশেষ কমিটির কো-চেয়ারম্যান সাংসদ সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত প্রথম আলোকে বলেন, হাইকোর্ট, সুপ্রিম কোর্টের রায়-পর্যবেক্ষণ এবং অতীত ও বর্তমান সংবিধান এবং দেশের সার্বিক রাজনৈতিক-সামাজিক পরিস্থিতি পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
প্রসঙ্গত, সংবিধানের তৃতীয় ভাগের ২৬(১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, এই ভাগের বিধানাবলির সঙ্গে অসামঞ্জস্য সব আইন যতখানি অসামঞ্জস্যপূর্ণ, এই সংবিধান প্রবর্তন হতে সেসব আইনের ততখানি বাতিল হবে। ২৬(২) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, রাষ্ট্র এই ভাগের কোনো বিধানের সঙ্গে অসামঞ্জস্য কোনো আইন প্রণয়ন করবে না এবং অনুরূপ আইন প্রণীত হলে তা এই বিভাগের বিধানের সঙ্গে যতখানি অসামঞ্জস্য, তা বাতিল হবে।
২৮(১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, শুধু ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারী-পুরুষভেদে বা জন্মস্থানের কারণে কোনো নাগরিকের প্রতি রাষ্ট্র বৈষম্য প্রদর্শন করবে না।
সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আকবর আলি খানের মতে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাসংবলিত সংবিধান জাতির আকাঙ্ক্ষা। তিনি বলেন, ৩৯ বছরে সংবিধানকে এমনভাবে কাটাছেঁড়া করা হয়েছে, যার অনেক কিছুই জাতিকে কলঙ্কিত করেছে। অনেক স্পর্শকাতর বিষয় সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত আছে। সে জন্য বারবার সংবিধান সংশোধনের মতো কাজে হাত না দিয়ে সংবিধান পর্যালোচনা করে যা দরকার, তা একটি সংশোধনীর মাধ্যমে করার পক্ষে মত দেন তিনি। তবে সংবিধান সংশোধনে সরকারের অগ্রাধিকার হওয়া উচিত।
জানা গেছে, পুনর্মুদ্রিত সংবিধানের প্রস্তাবনায় একাত্তরের ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা ও ১৭ এপ্রিল মুজিবনগর সরকারের ঘোষণাপত্র থাকছে। এর ওপরেই থাকবে ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’। এ ছাড়া নির্বাহী বিভাগ, বিচার বিভাগ ও সংসদকর্মেও বেশ কিছু সংশোধনীমূলক বক্তব্য নতুন করে যোগ হচ্ছে সংবিধানে।
ধর্মনিরপেক্ষতার নীতিটি বাস্তবায়ন করা হবে এসব বিষয়কে বর্জন করে: (ক) সব ধরনের সাম্প্রদায়িকতা, (খ) ধর্মভিত্তিক রাজনীতির রাষ্ট্রীয় অনুমোদন, (গ) ধর্মকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা, (ঘ) বিশেষ কোনো ধর্মাবলম্বী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে বৈষম্য অথবা হয়রানি। ১৯৭৭ সালের ঘোষণা আদেশ নম্বর-১ দ্বারা মূল অনুচ্ছেদ ১২ বিলুপ্ত করা হয়।
রাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের নীতিগত ভিত্তির ক্ষেত্রেও বাহাত্তরের সংবিধানের নীতি প্রতিস্থাপন করা হচ্ছে।
আর্টিকেল ১০২-এর অধীনে জাতীয় সংসদ আইন মোতাবেক হাইকোর্ট বিভাগের ক্ষমতা ক্ষুণ্ন না করে অন্যান্য আদালতকে তার স্থানীয় ক্ষমতার সীমা অনুযায়ী ক্ষমতায়ন করতে পারে, যাতে আদালতগুলো ওই সব ক্ষমতা বা এগুলোর যেকোনো একটি ব্যবহার করতে পারে বলে নতুন বক্তব্য সংবিধানে পুনর্মুদ্রিত করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ কলাবরেটরস (বিশেষ ট্রাইব্যুনাল) আদেশসংক্রান্ত সংবিধানের ১২২ অনুচ্ছেদের ৪(ঙ) পুনর্বহাল হচ্ছে। ফলে ১৯৭২ সালে এই আইনের অধীনে যারা দোষী সাব্যস্ত হয়েছিল বা যাদের নামে মামলা হয়েছিল, সেগুলো পুনরুজ্জীবিত করা যাবে। পঁচাত্তরের ৩ নম্বর সামরিক ফরমানবলে ১৯৭২ সালের এই আদেশ বাতিল করা হয়েছিল।
পঞ্চম সংশোধনী বাতিল করে দেওয়া সুপ্রিম কোর্টের রায় ও নির্দেশনা অনুযায়ী সংবিধান পুনর্মুদ্রিত হচ্ছে এভাবেই। আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে রায় ও নির্দেশনার আলোকে সংবিধানে কী কী বিষয় কীভাবে প্রতিস্থাপিত হবে আর কী কী বিষয় বিলুপ্ত হবে, তা চূড়ান্ত করা হয়েছে। ইতিমধ্যে পাণ্ডুলিপি সরকারি ছাপাখানায় পাঠানো হয়েছে।
সংবিধানের কমবেশি ২৫টি অনুচ্ছেদের সম্পূর্ণ বা অংশবিশেষ পুনর্বহাল বা বাদ দেওয়া হয়েছে। উল্লেখযোগ্য অনুচ্ছেদগুলো হচ্ছে: ৮, ৯, ১০, ১২, ২৫, ৩৮, ৪২, ৪৭, ৬৪, ৬৬, ৮০, ৮৮, ৯৩, ৯৫, ৯৮, ৯৯, ১০১, ১০২, ১০৩, ১০৭, ১১৭, ১২২, ১৪২, ১৪৫(ক) ও ১৫২। সংবিধানের ১৪২ অনুচ্ছেদে গণভোটের যে বিধান ছিল, সেটিও বাদ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া চতুর্থ তফসিলের ৩(৩ক) ও ১৮ দফায় ১৯৭৫ সালের সামরিক শাসন ও সামরিক ফরমানকে বৈধতা দিয়ে যেসব বিধান রাখা হয়েছিল, তা বাদ দেওয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পঞ্চম সংশোধনীর রায় ও নির্দেশনার আলোকে সংবিধান পুনর্মুদ্রণ করা হলে অনেকগুলো বিষয় পরস্পরবিরোধী হবে, যা সংবিধানের মৌলিক নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে না। এটি অনেক ক্ষেত্রে স্ববিরোধী হিসেবে প্রতিভাত হবে।
জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, যেভাবে উচ্চ আদালতের রায় ও নির্দেশনার আলোকে সংবিধানের নতুন সংযোজন ও বিয়োজন হচ্ছে, সেভাবেই সরকারি ছাপাখানায় পাণ্ডুলিপি পাঠানো হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, সাংঘর্ষিক বিষয় কিছু থাকলে সংবিধান সংশোধন-সম্পর্কিত বিশেষ কমিটি তা বিবেচনা করে সংসদে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনতে পারে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সংবিধানের অষ্টম সংশোধনী নিয়ে হাইকোর্টে মামলা রয়েছে। তাই এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করা যাবে না। তবে যেটুকু করা হচ্ছে, তা সম্পূর্ণ রায় ও নির্দেশনার আলোকে।
সামরিক শাসক এরশাদের আমলে ১৯৮৮ সালে জাতীয় সংসদে অষ্টম সংশোধনীর মাধ্যমে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম ঘোষণা করা হয়। এ ক্ষেত্রে সংবিধানের ২ অনুচ্ছেদে অতিরিক্ত ২(ক) অনুচ্ছেদ প্রতিস্থাপন করে বলা হয়, প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম হবে। তবে অন্যান্য ধর্মও প্রজাতন্ত্রে শান্তিতে পালন করা যাবে।
বিশিষ্ট আইনজীবী এম জহির প্রথম আলোকে বলেন, সংশোধনে গঠিত বিশেষ কমিটিকে অবশ্যই ১২ অনুচ্ছেদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হয়, এমন সব বিষয় বিবেচনায় নেওয়া উচিত হবে।
বিশিষ্ট আইনীজীবী শাহ্দীন মালিক বলেন, সংবিধানের ১২ অনুচ্ছেদ প্রতিস্থাপিত হলে অষ্টম সংশোধনী এর সঙ্গে সাংঘর্ষিক হবে। সংবিধানের ২৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রণীত কোনো আইন-বিধান পরস্পর আইনের সঙ্গে যতটা সাংঘর্ষিক, ততটা বাতিল বলে গণ্য হবে। সংবিধানকে বলা হয় সর্বোচ্চ আইন, তাই এর কোনো অংশ আরেকটি অংশের সঙ্গে সাংঘর্ষিক থাকলে তা বিবেচনায় নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
বাহাত্তরের সংবিধানের ১২ অনুচ্ছেদে বলা ছিল, ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি বাস্তবায়নের জন্য (ক) সর্বপ্রকার সাম্প্রদায়িকতা (খ) রাষ্ট্র কর্তৃক কোনো ধর্মকে রাজনৈতিক মর্যাদা দান (গ) রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ধর্মীয় অপব্যবহার এবং (ঘ) কোনো বিশেষ ধর্ম পালনকারী ব্যক্তির প্রতি বৈষম্য, তার ওপর নিপীড়ন বিলোপ করা হবে।
আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, সুপ্রিম কোর্টের রায় ও পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী ১৯৭২ সালের মূল সংবিধানে সন্নিবেশিত ১২ অনুচ্ছেদ প্রতিস্থাপন হচ্ছে।
সংবিধান সংশোধনে গঠিত বিশেষ কমিটির কো-চেয়ারম্যান সাংসদ সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত প্রথম আলোকে বলেন, হাইকোর্ট, সুপ্রিম কোর্টের রায়-পর্যবেক্ষণ এবং অতীত ও বর্তমান সংবিধান এবং দেশের সার্বিক রাজনৈতিক-সামাজিক পরিস্থিতি পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
প্রসঙ্গত, সংবিধানের তৃতীয় ভাগের ২৬(১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, এই ভাগের বিধানাবলির সঙ্গে অসামঞ্জস্য সব আইন যতখানি অসামঞ্জস্যপূর্ণ, এই সংবিধান প্রবর্তন হতে সেসব আইনের ততখানি বাতিল হবে। ২৬(২) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, রাষ্ট্র এই ভাগের কোনো বিধানের সঙ্গে অসামঞ্জস্য কোনো আইন প্রণয়ন করবে না এবং অনুরূপ আইন প্রণীত হলে তা এই বিভাগের বিধানের সঙ্গে যতখানি অসামঞ্জস্য, তা বাতিল হবে।
২৮(১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, শুধু ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারী-পুরুষভেদে বা জন্মস্থানের কারণে কোনো নাগরিকের প্রতি রাষ্ট্র বৈষম্য প্রদর্শন করবে না।
সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আকবর আলি খানের মতে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাসংবলিত সংবিধান জাতির আকাঙ্ক্ষা। তিনি বলেন, ৩৯ বছরে সংবিধানকে এমনভাবে কাটাছেঁড়া করা হয়েছে, যার অনেক কিছুই জাতিকে কলঙ্কিত করেছে। অনেক স্পর্শকাতর বিষয় সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত আছে। সে জন্য বারবার সংবিধান সংশোধনের মতো কাজে হাত না দিয়ে সংবিধান পর্যালোচনা করে যা দরকার, তা একটি সংশোধনীর মাধ্যমে করার পক্ষে মত দেন তিনি। তবে সংবিধান সংশোধনে সরকারের অগ্রাধিকার হওয়া উচিত।
জানা গেছে, পুনর্মুদ্রিত সংবিধানের প্রস্তাবনায় একাত্তরের ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা ও ১৭ এপ্রিল মুজিবনগর সরকারের ঘোষণাপত্র থাকছে। এর ওপরেই থাকবে ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’। এ ছাড়া নির্বাহী বিভাগ, বিচার বিভাগ ও সংসদকর্মেও বেশ কিছু সংশোধনীমূলক বক্তব্য নতুন করে যোগ হচ্ছে সংবিধানে।
ধর্মনিরপেক্ষতার নীতিটি বাস্তবায়ন করা হবে এসব বিষয়কে বর্জন করে: (ক) সব ধরনের সাম্প্রদায়িকতা, (খ) ধর্মভিত্তিক রাজনীতির রাষ্ট্রীয় অনুমোদন, (গ) ধর্মকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা, (ঘ) বিশেষ কোনো ধর্মাবলম্বী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে বৈষম্য অথবা হয়রানি। ১৯৭৭ সালের ঘোষণা আদেশ নম্বর-১ দ্বারা মূল অনুচ্ছেদ ১২ বিলুপ্ত করা হয়।
রাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের নীতিগত ভিত্তির ক্ষেত্রেও বাহাত্তরের সংবিধানের নীতি প্রতিস্থাপন করা হচ্ছে।
আর্টিকেল ১০২-এর অধীনে জাতীয় সংসদ আইন মোতাবেক হাইকোর্ট বিভাগের ক্ষমতা ক্ষুণ্ন না করে অন্যান্য আদালতকে তার স্থানীয় ক্ষমতার সীমা অনুযায়ী ক্ষমতায়ন করতে পারে, যাতে আদালতগুলো ওই সব ক্ষমতা বা এগুলোর যেকোনো একটি ব্যবহার করতে পারে বলে নতুন বক্তব্য সংবিধানে পুনর্মুদ্রিত করা হচ্ছে।
No comments:
Post a Comment