পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন ও আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেওয়ার আহ্বান
চাকমা রাজা দেবাশীষ রায় বলেছেন, ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর পার্বত্য শান্তিচুক্তি সই হওয়ার পর সেখানে এমন কোনো বড় ধরনের সংঘাত দেখা যায়নি, যার কারণে পার্বত্য চট্টগ্রামে সশস্ত্র বিদ্রোহ দমন কর্মকাণ্ড (কাউন্টার ইনসার্জেন্সি) চালাতে হবে। বর্তমানে সেখানে ‘মশা মারতে কামান দাগানোর’ মতোই সেনাবাহিনীকে ব্যবহার করা হচ্ছে। তিনি বলেন, সমতল অঞ্চল ও পার্বত্য অঞ্চলের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির মধ্যে তেমন পার্থক্য না থাকলেও পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিস্থিতিকে সব সময় নিরাপত্তার চশমার দৃষ্টিতে দেখা হচ্ছে।
গতকাল শনিবার রাজধানীর একটি রেস্তোরাঁয় সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন। পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক কমিটি এ সভার আয়োজন করে।
দেবাশীষ রায় বলেন, পার্বত্য চুক্তিকে এমন একটা কালো মলাট দেওয়া হয়েছে, যাতে মনে হয় যে এ চুক্তির মাধ্যমে আদিবাসীদের বাঙালিদের চেয়ে বেশি অধিকার দেওয়া হয়েছে। এ কারণে চুক্তি বাস্তবায়নে অনীহা থেকে যাচ্ছে। তিনি আদিবাসীদের অধিকার রক্ষায় সাংবিধানিক স্বীকৃতির পাশাপাশি ১৯০০ সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসনবিধি এবং পার্বত্য আঞ্চলিক পরিষদ ও পার্বত্য জেলা পরিষদের আইনগত স্বীকৃতি দাবি করেন।
মতবিনিময় সভার সভাপতি বিচারপতি গোলাম রাব্বানী বলেন, আদিবাসীদের ভূমি অধিকার ও স্বশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৯৯৭ সালে যে চুক্তি সম্পাদিত হয়েছিল, সেই দর্শন সরকারগুলো অনুসরণ করছে না। তিনি বলেন, এ চুক্তি বাস্তবায়নে আমলারাও অন্যতম বাধা। জেলা প্রশাসকেরা সম্মেলন ডেকে পার্বত্য চট্টগ্রাম আইন সংশোধনের কথা বলছেন। আমলা-নির্ভরতা সরকারগুলোর অন্যতম দুর্বল দিক।
গোলাম রাব্বানী আরও বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি ও স্বশাসন দিয়ে দিলে সমস্যা অনেকখানি কমে যেত। এ জন্য অতিরিক্ত সেনা মোতায়েনের কোনো প্রয়োজন নেই।
পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক কমিটির সভাপতি গৌতম দেওয়ান বলেন, এক যুগ আগে পার্বত্য চুক্তি স্বাক্ষরিত হলেও চুক্তির মৌলিক বিষয়গুলো আজও বাস্তবায়িত হয়নি। বর্তমান মহাজোট সরকারের দেড় বছর পেরিয়ে গেলেও চুক্তি বাস্তবায়নে তেমন কোনো অগ্রগতি বা উদ্যোগ লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। কিন্তু চুক্তি বাস্তবায়িত না হলে এটি কেবল পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যা নয়, জাতীয় সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে।
এ মতবিনিময় সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন তথ্য কমিশনার সাদেকা হালিম, বেসরকারি সংস্থা নিজেরা করির সমন্বয়কারী খুশী কবির, গবেষক স্বপন আদনান, পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক কমিটির সদস্য মংসানু চৌধুরী, প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক আব্দুল কাইয়ুম ও ভোরের কাগজ-এর সম্পাদক শ্যামল দত্ত। বিজ্ঞপ্তি।
No comments:
Post a Comment