ভূমি কমিশন আইন সংশোধনে মতৈক্য
পার্বত্য চুক্তি সংবিধানে যুক্ত করার উদ্যোগ
সাধারণভাবে ‘শান্তি চুক্তি’ নামে পরিচিত পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তিকে দেশের সংবিধানে যুক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বিষয়টি নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটিতে আলোচনার পর এ উদ্যোগ বাস্তবায়নের প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সরকারি সূত্রে এ খবর জানা গেছে।
এদিকে পার্বত্য চট্টগ্রামের ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য গঠিত ভূমি কমিশনকে কার্যকর করতে ভূমি কমিশন আইন সংশোধনের বিষয়ে একটি প্রধান বিষয় ছাড়া বাকি সব বিষয়ে মতৈক্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বলে জানা গেছে। গতকাল বুধবার পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে আন্তমন্ত্রণালয় সভায় এই মতৈক্য হয়। এখন পার্বত্য ও ভূমি মন্ত্রণালয়ের মধ্যে শিগগিরই একটি বৈঠকে আইন সংশোধনের বিষয়টি চূড়ান্ত হবে।
তবে কাপ্তাইসহ বেশ কিছু সংরক্ষিত এলাকা ভূমি কমিশনের আওতাধীন না থাকার যে বিধান আইনে রয়েছে, সেটি সংশোধনের ব্যাপারে ভূমি এবং পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের আপত্তি রয়েছে। ভূমি কমিশন আইন সংশোধনের এটিই এখন একমাত্র প্রধান বিষয়, যা নিয়ে মতানৈক্য আছে।
সংবিধানে সংযুক্তি: পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি সংবিধানে সংযুক্ত করার বিষয়ে সরকারি সূত্র জানায়, এ চুক্তি যাতে কখনো কেউ বাতিল করতে, এমনকি আইনগতভাবে চ্যালেঞ্জ করতে না পারে এবং চুক্তির সম্পূর্ণ বাস্তবায়নও যাতে নিশ্চিত হয়, সে জন্যই এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় প্রস্তাব তৈরি করে সংবিধান সংশোধনের জন্য গঠিত বিশেষ কমিটিতে উপস্থাপন করা হবে। সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্মতিতেই এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী দীপংকর তালুকদার সরকারের ওই উদ্যোগ ও প্রক্রিয়া শুরুর সত্যতা স্বীকার করে গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, বিষয়টি নিয়ে আলাপ-আলোচনা শুরু হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম ও আদিবাসী জনগণের সাংবিধানিক স্বীকৃতি ও অধিকার রক্ষায় বর্তমান সরকার আরও অনেক কিছুই করছে এবং করবে।
এ বিষয়ে মন্তব্য করার অনুরোধ করলে চাকমা সার্কেলের প্রধান রাজা দেবাশীষ রায় প্রথম আলোকে বলেন, এটি অবশ্যই একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ। এর মাধ্যমে দেশের সংবিধান আরও সমৃদ্ধ হবে। এ উদ্যোগের জন্য তিনি সরকারকে অভিনন্দন জানান।
উল্লেখ্য, ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর সরকার ও জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) মধ্যে স্বাক্ষরিত ওই চুক্তি পার্বত্য চট্টগ্রামে দীর্ঘদিনের সশস্ত্র যুদ্ধের অবসান ঘটায়। কিন্তু চুক্তির মৌলিক বিষয়গুলো এখন পর্যন্ত বাস্তবায়িত হয়নি। তবে চুক্তি বাতিল করার দাবিসহ অনেক বিষয় আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে।
আইন সংশোধন: পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি এবং ওই চুক্তি অনুযায়ী ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তির লক্ষ্যে প্রণীত ভূমি কমিশন আইনের মধ্যে অসামঞ্জস্য থাকায় এর আগে গঠিত তিনটি ভূমি কমিশন কোনো কাজ করতে পারেনি। বর্তমান সরকার ভূমি কমিশন পুনর্গঠনের পরও কমিশনের কার্যক্রম নিয়ে, বিশেষ করে পার্বত্য চট্টগ্রামে ভূমি জরিপ নিয়ে তীব্র মতবিরোধ সৃষ্টি হয়। এই বিরোধ মীমাংসায় সরকার ভূমি কমিশন আইন সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে।
২০০০ সালে ভূমি কমিশন আইন প্রণীত হওয়ার পরই জনসংহতি সমিতি ২৪টি স্থানে সংশোধনের প্রস্তাব দেয়। এগুলো নিয়ে বিভিন্ন সময় আলোচনা হয়েছে। বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে আইনমন্ত্রী মওদুদ আহমদ জনসংহতি সমিতির সব প্রস্তাবের সঙ্গেই একমত হয়েছিলেন। কিন্তু তার পরও আইনটি সংশোধন করা হয়নি।
বর্তমান সরকারের উদ্যোগের অংশ হিসেবে সম্প্রতি ভূমি মন্ত্রণালয় ওই আইনের ছয়টি ধারা সংশোধনের সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু তাতে আইনটি পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি অনুযায়ী সম্পূর্ণ কার্যকর হবে না বলে পার্বত্য চট্টগ্রামের সংশ্লিষ্ট সব পক্ষ মত প্রকাশ করে। এই প্রেক্ষাপটে প্রতিমন্ত্রী দীপংকর তালুকদারের সভাপতিত্বে গতকাল আন্তমন্ত্রণালয় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
গতকালের সভায় ভূমি কমিশন চেয়ারম্যানের নিরঙ্কুশ ক্ষমতা, কমিশনের সভার কোরাম ও সদস্যদের প্রতিনিধি পাঠানোর বিধানগুলো সংশোধনের বিষয়ে মতৈক্য হয়েছে।
ভূমি কমিশন আইন অনুযায়ী কমিশনের সভা কোনো বিষয়ে একমত না হলে সে বিষয়ে চেয়ারম্যানের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। এ বিধান পরিবর্তন করা হবে। চেয়ারম্যান ও কমিশনের দুই সদস্য উপস্থিত থাকলেই কোরাম হওয়ার বিধানও পাল্টে চেয়ারম্যান ও তিন সদস্যের উপস্থিতিতে কোরাম হওয়ার বিধান করা হবে। এ ছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রামের তিনটি সার্কেলের তিন প্রধান (চাকমা রাজা, মং রাজা ও বোমাং রাজা) যাতে কমিশনের সভায় তাঁদের প্রতিনিধি পাঠাতে পারেন, সে জন্যও আইন সংশোধন করা হবে।
প্রতিমন্ত্রী দীপংকর তালুকদার বলেন, আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সব মতানৈক্যের অবসান হবে। ভূমি কমিশন পার্বত্য চট্টগ্রামের ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তির কাজ যথাসময়ে শুরু করতে পারবে।
---------------
source: prothom-alo (23.09.2010)
No comments:
Post a Comment