ফিরে দেখা বাঘাইছড়ি
দোষীদের বিচার কি হবে না?
ইলিরা দেওয়ান | তারিখ: ২৩-০২-২০১১
বাঘাইছড়ি সহিংসতার এক বছর পরেও সেখানে ভীতির আবহ কাটেনি। এত দিনেও এ ঘটনায় জন্য দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করা যায়নি। ক্ষতিগ্রস্ত চার শতাধিক পরিবার এখনো অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে চেয়ে আছে। বাঘাইছড়ি, খাগড়াছড়ি, মাইচছড়ি, মহালছড়ি, নানিয়াচর, লোগাং, লংগদু, মাল্যায় একের পর এক সহিংসতা আমরা দেখলাম। সহিংসতার ঘটনাগুলো একসময় ক্রমে ধূসর হয়ে পড়ে। কিন্তু ভুক্তভোগীরা সেই গভীর ক্ষত বয়ে বেড়ায় সারা জীবন। পার্বত্য চট্টগ্রামে নিপীড়নের এমন দগদগে ঘা শুকোতে আর কতকাল অপেক্ষায় থাকতে হবে? পাহাড়ের জনগণ সরকারের কাছ থেকে কবে পাবে এ প্রশ্নের উত্তর?
দেশব্যাপী সর্বশেষ জরুরি শাসন চলাকালে বাঘাইহাটের গঙ্গারামমুখ এলাকায় যখন নতুনভাবে বাঙালি বসতি স্থাপিত হয়, তখন থেকেই সেখানে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনার সূত্রপাত। আর এই উত্তেজনার প্রথম বলি লাদুমণি চাকমা। ২০০৮ সালের ১৯ আগস্ট তাঁর নিজের ঘর থেকে টেনেহিঁচড়ে বের করে এনে বাড়ির অদূরে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। লাদুমণি পরিবারের অন্য সদস্যরা সন্ত্রাসীদের চিনতে পারলেও কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। উপরন্তু সন্ত্রাসীরা লাদুমণি পরিবারের সদস্যদের প্রাণনাশেরও হুমকি দেয়। ২০০৮ সালে লাদুমণি হত্যা থেকে শুরু হয়ে ২০১০ সালে বুদ্ধপুদি, লক্ষ্মীবিজয় চাকমা পর্যন্ত গড়িয়েছে।
ভূমিবিরোধকে কেন্দ্র করে ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারির সহিংস ঘটনা পার্বত্য চট্টগ্রামের জন্য নতুন কোনো ঘটনা ছিল না। পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রায়সব সহিংসতার পেছনে ভূমিবিরোধই ছিল মুখ্য নিয়ামক। তাই শুধু চুক্তি বাস্তবায়নের আশ্বাসে পাহাড়ে স্থায়ী শান্তি আসা সম্ভব নয়। সবার আগে দরকার যত দ্রুত সম্ভব ভূমিবিরোধ নিষ্পত্তির উদ্যোগ। ভূমি কমিশনের বর্তমান আইন দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের জটিল ভূমিবিরোধ নিষ্পত্তি যে অসম্ভব, সেটি বহু আগেই প্রমাণিত হয়েছে। সম্প্রতি সংসদ উপনেতা ও চুক্তি বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক সাজেদা চৌধুরী বলেছিলেন, শীতকালীন সংসদ অধিবেশনে ভূমি কমিশন আইনের ত্রুটিপূর্ণ দিকগুলো উত্থাপন করে তা সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হবে। যদিও এখন পর্যন্ত এর আভাস মেলেনি।
বাঘাইছড়ির সহিংসতা খাগড়াছড়ি জেলা সদরেও ছড়িয়ে পড়েছিল। সেনানিবাসের মাত্র ৩০০ থেকে ৪০০ গজ দূরে মহাজনপাড়ায় ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটলেও সেখানে নিরাপত্তা বাহিনীর পৌঁছাতে যে সময় লেগেছে, ওই সময়ে ইতিমধ্যে ১০-১২টি বসতঘর ও কয়েকটি পাহাড়ি মালিকানাধীন দোকান পুড়ে ছাই হয়ে যায়। অন্যদিকে থানার ২০০ গজের মধ্যে হাইস্কুলপাড়ায় শিক্ষকের বাসায় লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। পুলিশ বাহিনী নিরাপত্তা ও প্রতিরোধের ব্যবস্থাও নিতে পারেনি। তাই সেদিনের পুলিশের ভূমিকা নিয়ে যেমন প্রশ্ন উঠেছে, তেমনি এ সহিংস ঘটনা রোধ করতে না পারার দায়ও প্রশাসন এড়াতে পারে না। শুধু সদর ওসিকে তৎক্ষণাৎ বদলি করে এ গভীর ক্ষতের দায়মুক্তি হয় না।
খাগড়াছড়ি সহিংসতার সবচেয়ে বিস্ময়কর ঘটনা ঘটে ২৩ ফেব্রুয়ারি দিনশেষে। সকালের সহিংসতার পর বেলা দুইটার দিকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে শহরে ১৪৪ ধারা জারির ঘোষণা প্রচার করা হয় মাইকযোগে। অথচ বিকেল চার-পাঁচটায় ১৪৪ ধারা ঘোষিত এলাকা থেকে বিপুল জমায়েত হয়ে মারমা-অধ্যুষিত গ্রাম সাতভাইয়াপাড়ায় হামলা চালিয়ে গ্রামের অধিকাংশ বসতঘর (৪০টির অধিক) জ্বালিয়ে দেওয়া সম্ভব হলো। তাহলে কি প্রশাসনের নিরাপত্তাব্যবস্থা এত দুর্বল ও ঠুনকো যে শহরের একপাশ নিরাপত্তা দিতে গিয়ে আরেক পাশ সম্পূর্ণ অরক্ষিত থাকে?
ঘটনা সেখানেই থেমে থাকেনি। বাঘাইছড়ির সহিংস ঘটনার কাভারেজ দিতে গিয়ে ঢাকা থেকে যেসব সাংবাদিক খাগড়াছড়ি শহর পর্যন্ত পৌঁছেছেন, তাঁদের আর বাঘাইছড়ি যেতে হয়নি। তাঁদের খাগড়াছড়ি জেলা সদরেই এর হিংস্র রূপ দেখতে হয়েছে। কয়েকজন সাংবাদিক পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে সন্ত্রাসীদের হাতে হামলারও শিকার হতে হয়েছে। অন্যদিকে সহিংসতার পর গণগ্রেপ্তার চালানোর সময় পাহাড়ি-অধ্যুষিত গ্রামে অভিযান চালিয়ে আইনজীবী, চাকরীজীবী, নিরীহ সাধারণ স্কুলছাত্রদের ঘর থেকে বের করে এনে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর পাহাড়ের ছোট্ট শহরগুলোর এই হলো বৈচিত্র্যপূর্ণ শাসনব্যবস্থা!
বাঘাইছড়ি-খাগড়াছড়ির সহিংসতার পর প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী তাঁদের উদ্বেগের কথা বলেছিলেন। প্রধানমন্ত্রী দোষী ব্যক্তিদের খুঁজে বের করার পাশাপাশি গোয়েন্দা-তৎপরতা বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন (সমকাল, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১০), স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন, প্রয়োজনে পাহাড়ে আরও সেনা মোতায়েন করা হবে (প্রথম আলো, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১০), পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বাঘাইহাট পরিদর্শনকালে বলেছিলেন, এক সপ্তাহের মধ্যে দোষী ব্যক্তিদের শনাক্ত করা হবে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, অন্যান্য অঞ্চল থেকে পার্বত্য এলাকায় অধিক হারে গোয়েন্দা উপস্থিতি থাকা সত্ত্বেও যেখানে এ সহিংসতার কিছুই তারা আঁচ করতে পারেনি, সেখানে শুধু গোয়েন্দা-তৎপরতা বাড়িয়ে জনগণের মধ্যে আতঙ্ক ছড়ানো কেন? আর সেনা মোতায়েন করে তো পাহাড়ের সব সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। জনগণের নিরাপত্তা কোনো বিশেষ বাহিনীর সংখ্যা বাড়ানোর ওপর নির্ভর করে না। তা ছাড়া, পার্বত্য প্রতিমন্ত্রীর ঘোষণার পরও গত এক বছরে এই সহিংস ঘটনায় কেউ গ্রেপ্তার বা বিচারের আওতায় এসেছে বলে শোনা যায়নি। তাই পাহাড়ে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য সবার আগে দরকার আন্তরিকতা ও অসাম্প্রদায়িক চেতনামনস্ক প্রশাসন, যেটি মানুষের মূল্যবোধ ও অধিকারকে সমানভাবে অগ্রাধিকার দিতে পারবে।
বাঘাইছড়ি ও খাগড়াছড়ির ঘটনা আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়েছিল। এ সময় ইউরোপীয় ইউনিয়ন, পার্বত্য চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক কমিশনসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা সরকারের কাছে এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের দাবি জানিয়েছিল।
ফেব্রুয়ারি মাস ভাষার মাস। অধিকার আদায়ের মাস। রক্তাক্ত বাঘাইছড়ি ঘটনার এক বছর পর পাহাড়ের মানুষ আবারও জোর দাবি জানাচ্ছে—বাঘাইহাট-খাগড়াছড়ি ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষী ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনা হোক। এর পাশাপাশি দেশের অপরাপর সব ভাষার সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেওয়া হোক। মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত করে আদিবাসী শিশুদের শিক্ষার মৌলিক অধিকার সংরক্ষণ করা হোক।
ইলিরা দেওয়ান: মানবাধিকারকর্মী ও কলাম লেখক।
ilira.dewan@gmail.com
দোষীদের বিচার কি হবে না?
ইলিরা দেওয়ান | তারিখ: ২৩-০২-২০১১
বাঘাইছড়ি সহিংসতার এক বছর পরেও সেখানে ভীতির আবহ কাটেনি। এত দিনেও এ ঘটনায় জন্য দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করা যায়নি। ক্ষতিগ্রস্ত চার শতাধিক পরিবার এখনো অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে চেয়ে আছে। বাঘাইছড়ি, খাগড়াছড়ি, মাইচছড়ি, মহালছড়ি, নানিয়াচর, লোগাং, লংগদু, মাল্যায় একের পর এক সহিংসতা আমরা দেখলাম। সহিংসতার ঘটনাগুলো একসময় ক্রমে ধূসর হয়ে পড়ে। কিন্তু ভুক্তভোগীরা সেই গভীর ক্ষত বয়ে বেড়ায় সারা জীবন। পার্বত্য চট্টগ্রামে নিপীড়নের এমন দগদগে ঘা শুকোতে আর কতকাল অপেক্ষায় থাকতে হবে? পাহাড়ের জনগণ সরকারের কাছ থেকে কবে পাবে এ প্রশ্নের উত্তর?
দেশব্যাপী সর্বশেষ জরুরি শাসন চলাকালে বাঘাইহাটের গঙ্গারামমুখ এলাকায় যখন নতুনভাবে বাঙালি বসতি স্থাপিত হয়, তখন থেকেই সেখানে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনার সূত্রপাত। আর এই উত্তেজনার প্রথম বলি লাদুমণি চাকমা। ২০০৮ সালের ১৯ আগস্ট তাঁর নিজের ঘর থেকে টেনেহিঁচড়ে বের করে এনে বাড়ির অদূরে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। লাদুমণি পরিবারের অন্য সদস্যরা সন্ত্রাসীদের চিনতে পারলেও কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। উপরন্তু সন্ত্রাসীরা লাদুমণি পরিবারের সদস্যদের প্রাণনাশেরও হুমকি দেয়। ২০০৮ সালে লাদুমণি হত্যা থেকে শুরু হয়ে ২০১০ সালে বুদ্ধপুদি, লক্ষ্মীবিজয় চাকমা পর্যন্ত গড়িয়েছে।
ভূমিবিরোধকে কেন্দ্র করে ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারির সহিংস ঘটনা পার্বত্য চট্টগ্রামের জন্য নতুন কোনো ঘটনা ছিল না। পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রায়সব সহিংসতার পেছনে ভূমিবিরোধই ছিল মুখ্য নিয়ামক। তাই শুধু চুক্তি বাস্তবায়নের আশ্বাসে পাহাড়ে স্থায়ী শান্তি আসা সম্ভব নয়। সবার আগে দরকার যত দ্রুত সম্ভব ভূমিবিরোধ নিষ্পত্তির উদ্যোগ। ভূমি কমিশনের বর্তমান আইন দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের জটিল ভূমিবিরোধ নিষ্পত্তি যে অসম্ভব, সেটি বহু আগেই প্রমাণিত হয়েছে। সম্প্রতি সংসদ উপনেতা ও চুক্তি বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক সাজেদা চৌধুরী বলেছিলেন, শীতকালীন সংসদ অধিবেশনে ভূমি কমিশন আইনের ত্রুটিপূর্ণ দিকগুলো উত্থাপন করে তা সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হবে। যদিও এখন পর্যন্ত এর আভাস মেলেনি।
বাঘাইছড়ির সহিংসতা খাগড়াছড়ি জেলা সদরেও ছড়িয়ে পড়েছিল। সেনানিবাসের মাত্র ৩০০ থেকে ৪০০ গজ দূরে মহাজনপাড়ায় ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটলেও সেখানে নিরাপত্তা বাহিনীর পৌঁছাতে যে সময় লেগেছে, ওই সময়ে ইতিমধ্যে ১০-১২টি বসতঘর ও কয়েকটি পাহাড়ি মালিকানাধীন দোকান পুড়ে ছাই হয়ে যায়। অন্যদিকে থানার ২০০ গজের মধ্যে হাইস্কুলপাড়ায় শিক্ষকের বাসায় লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। পুলিশ বাহিনী নিরাপত্তা ও প্রতিরোধের ব্যবস্থাও নিতে পারেনি। তাই সেদিনের পুলিশের ভূমিকা নিয়ে যেমন প্রশ্ন উঠেছে, তেমনি এ সহিংস ঘটনা রোধ করতে না পারার দায়ও প্রশাসন এড়াতে পারে না। শুধু সদর ওসিকে তৎক্ষণাৎ বদলি করে এ গভীর ক্ষতের দায়মুক্তি হয় না।
খাগড়াছড়ি সহিংসতার সবচেয়ে বিস্ময়কর ঘটনা ঘটে ২৩ ফেব্রুয়ারি দিনশেষে। সকালের সহিংসতার পর বেলা দুইটার দিকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে শহরে ১৪৪ ধারা জারির ঘোষণা প্রচার করা হয় মাইকযোগে। অথচ বিকেল চার-পাঁচটায় ১৪৪ ধারা ঘোষিত এলাকা থেকে বিপুল জমায়েত হয়ে মারমা-অধ্যুষিত গ্রাম সাতভাইয়াপাড়ায় হামলা চালিয়ে গ্রামের অধিকাংশ বসতঘর (৪০টির অধিক) জ্বালিয়ে দেওয়া সম্ভব হলো। তাহলে কি প্রশাসনের নিরাপত্তাব্যবস্থা এত দুর্বল ও ঠুনকো যে শহরের একপাশ নিরাপত্তা দিতে গিয়ে আরেক পাশ সম্পূর্ণ অরক্ষিত থাকে?
ঘটনা সেখানেই থেমে থাকেনি। বাঘাইছড়ির সহিংস ঘটনার কাভারেজ দিতে গিয়ে ঢাকা থেকে যেসব সাংবাদিক খাগড়াছড়ি শহর পর্যন্ত পৌঁছেছেন, তাঁদের আর বাঘাইছড়ি যেতে হয়নি। তাঁদের খাগড়াছড়ি জেলা সদরেই এর হিংস্র রূপ দেখতে হয়েছে। কয়েকজন সাংবাদিক পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে সন্ত্রাসীদের হাতে হামলারও শিকার হতে হয়েছে। অন্যদিকে সহিংসতার পর গণগ্রেপ্তার চালানোর সময় পাহাড়ি-অধ্যুষিত গ্রামে অভিযান চালিয়ে আইনজীবী, চাকরীজীবী, নিরীহ সাধারণ স্কুলছাত্রদের ঘর থেকে বের করে এনে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর পাহাড়ের ছোট্ট শহরগুলোর এই হলো বৈচিত্র্যপূর্ণ শাসনব্যবস্থা!
বাঘাইছড়ি-খাগড়াছড়ির সহিংসতার পর প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী তাঁদের উদ্বেগের কথা বলেছিলেন। প্রধানমন্ত্রী দোষী ব্যক্তিদের খুঁজে বের করার পাশাপাশি গোয়েন্দা-তৎপরতা বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন (সমকাল, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১০), স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন, প্রয়োজনে পাহাড়ে আরও সেনা মোতায়েন করা হবে (প্রথম আলো, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১০), পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বাঘাইহাট পরিদর্শনকালে বলেছিলেন, এক সপ্তাহের মধ্যে দোষী ব্যক্তিদের শনাক্ত করা হবে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, অন্যান্য অঞ্চল থেকে পার্বত্য এলাকায় অধিক হারে গোয়েন্দা উপস্থিতি থাকা সত্ত্বেও যেখানে এ সহিংসতার কিছুই তারা আঁচ করতে পারেনি, সেখানে শুধু গোয়েন্দা-তৎপরতা বাড়িয়ে জনগণের মধ্যে আতঙ্ক ছড়ানো কেন? আর সেনা মোতায়েন করে তো পাহাড়ের সব সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। জনগণের নিরাপত্তা কোনো বিশেষ বাহিনীর সংখ্যা বাড়ানোর ওপর নির্ভর করে না। তা ছাড়া, পার্বত্য প্রতিমন্ত্রীর ঘোষণার পরও গত এক বছরে এই সহিংস ঘটনায় কেউ গ্রেপ্তার বা বিচারের আওতায় এসেছে বলে শোনা যায়নি। তাই পাহাড়ে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য সবার আগে দরকার আন্তরিকতা ও অসাম্প্রদায়িক চেতনামনস্ক প্রশাসন, যেটি মানুষের মূল্যবোধ ও অধিকারকে সমানভাবে অগ্রাধিকার দিতে পারবে।
বাঘাইছড়ি ও খাগড়াছড়ির ঘটনা আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়েছিল। এ সময় ইউরোপীয় ইউনিয়ন, পার্বত্য চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক কমিশনসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা সরকারের কাছে এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের দাবি জানিয়েছিল।
ফেব্রুয়ারি মাস ভাষার মাস। অধিকার আদায়ের মাস। রক্তাক্ত বাঘাইছড়ি ঘটনার এক বছর পর পাহাড়ের মানুষ আবারও জোর দাবি জানাচ্ছে—বাঘাইহাট-খাগড়াছড়ি ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষী ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনা হোক। এর পাশাপাশি দেশের অপরাপর সব ভাষার সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেওয়া হোক। মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত করে আদিবাসী শিশুদের শিক্ষার মৌলিক অধিকার সংরক্ষণ করা হোক।
ইলিরা দেওয়ান: মানবাধিকারকর্মী ও কলাম লেখক।
ilira.dewan@gmail.com
No comments:
Post a Comment